মোঃ জালাল উদ্দিন,পেকুয়া;
পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বর্তমান সরকারের হাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও বারবার বৈষম্যের শিকার হয়েছে শীলখালী ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ড অধ্যূষিত এলাকা কসাই পাড়া ।নেই কোন শিক্ষা ব্যবস্থা, নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা এমন একটি অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকার নাম শীলখালী ইউনিয়নের কসাই পাড়া।
যেটিতে কোন ভাবেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেনি। নেই কোন তেমন যোগাযোগ ব্যবস্থাও। বসবাসরত অধিবাসীরা পাননি সরকার কর্তৃক সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত মুলক কর্মসূচী বিধবাভাতা,বয়স্ক ভাতা,পতিবন্ধী ভাতা,স্বামী পরিত্যক্তভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভিজিডি ও জি আর এর আওতায় আসেনি একবারও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা ছিল বংশানুক্রমে কসাই কাজ (মাংসা বিক্রি) ও পালকির বেয়াড়া (নব বধু বহণকারী)। তাদের আদি পেশা হিসাবে বয়স্ক এবং যুবকেরা কম বেশি অনেকই এ পেশায় নিয়োজিত। কালের বিবর্তনে পালকি,ব্যান্ড দল কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির প্রচলনের ফলে পশু জবাইতে শ্রমিকের প্রয়োজন অল্প কয়েকজনে দরকার পড়ে। তাই তারা অন্য পেশাতে ধাবিত হতে পারেনি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে। কাজেই কর্মের অভাবে বেকারত্ব গ্লানিতে বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তেছে। ফলে অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে প্রায় সময়। উভয় ওয়ার্ডের ১ একর যায়গাতে প্রায় ৩ শত বসতবাড়ির জনসংখ্যা প্রায় প্রায় ২ হাজার জন। তাদের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় স্বাস্থ্য সম্মত কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও নেই। বাড়ীর পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তাদের প্রকৃতির কাজ সম্পন্ন করতে হয়। আবার অনেকেই বাড়ীর সামনে অস্বাস্থ্য কর পরিবেশে টয়লেট ব্যবহার করছে। যার কারণে তাদের ডাইরিয়ার মত বিভিন্ন রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এ প্রতিবেদক এলাকার লোকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান এলাকার পাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। যার কারণে কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সুযোগে যুবক থেকে শুরু করে কোমলমতি শিশুরা পর্যন্ত জড়াচ্ছে মাদক বিকিকিনির কাজে। হাত বাড়ালেই ইয়াবা কিংবা মদ পাওয়া যায়। কিশোর-কিশোরী কিংবা শিশুরা আর লেখাপড়ার দিকে দাবীত হচ্ছে না। এ এলাকাটি এখন কসাই পাড়া থেকে ইয়াবা পল্লী হিসাবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ইয়াবা কাজে সমাজপতিরা বাঁধা দিলে লেগে যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা। একটি ছোট্ট জায়গায় ঘন বসতি হওয়ায় তারা নানা অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত করে পার পেয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সোনা মিয়া বলেন, আমি কসাই কাজ করি। কিন্তু এলাকায় কোন রকম শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে আমাদের সন্তান কিংবা এলাকার কিশোর কিশোরীরা নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা পারভিন আকতার বলেন, আমাদের এলাকাটি অত্যন্ত অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকা। এ এলাকার বাসিন্দাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের সময় অনেকই অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত হলে আর খোঁজ থাকে না তাদের। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, অনেক জনপ্রতিনিধি যায় আর আসে কিন্ত এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কারো কোন চিন্তা থাকে না। পেকুয়ার মধ্যে আমাদের এলাকাটি সব চেয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত। নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা, নেই কোন শিক্ষা ব্যবস্থা। ফলে এলাকার যুবক যুবতিরা নানা অপরাধসহ তারা দিন দিন খারাপ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। সামান্য জায়গায় ঘনবসতিতে জীবন কাটাচ্ছে প্রায় ২৫০/৩০০ পরিবার।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোছাইনের কাছে কসাই পাড়ার বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ না দেয়ায় বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন,বর্তমান জনবান্ধব সরকারের আমলে কেউ বা এলাকা থাকতে পারে না।অবহেলিত কসাই পাড়ার বিষয়টি আমি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।