প্রথম পাতা ৯ মার্চ ২০২২, বুধবার | সর্বশেষ আপডেট: ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
ইউক্রেন যুদ্ধে বীরের মর্যাদা পেয়েছে ১১ বছর বয়সী বালক হাসান। দেশ থেকে একা একা প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছে গেছে পাশের দেশ স্লোভাকিয়ায়। সীমান্তরক্ষীরা তাকে আদরে বুকে তুলে নিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা দিয়েছেন খাবার ও পানি। তার প্রসারিত মুখের হাসিতে অশ্রুসজল হয়েছেন সীমান্তের উদ্বিগ্ন সব মানুষ। তারাই তাকে যুদ্ধের প্রকৃত বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সঙ্গে তার শুধু দুটি ছোট্ট ব্যাগ। একটি পাসপোর্ট।
আর আছে আত্মীয়দের ফোন নম্বর। এই সম্বল করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে অজানার পথে পা বাড়িয়েছে ১১ বছর বয়সী বালক হাসান। জেপোরোজিয়া থেকে পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পথ। তারপর নিরাপদে পৌঁছেছে স্লোভাকিয়ায়। হাসানের বয়স্ক নানীকে একা রেখে তার মা বাড়ি ছাড়বেন না বলে, হাসান একা পথে নামে। তাকে একটি ট্রেনে তুলে দিয়েছেন তার মা। নির্মম ভাগ্যকে সঙ্গী করে যখন সে সীমান্তে পৌঁছে তখন তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তারা হাসানকে একজন সত্যিকারের বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এতটা পথ পাড়ি দিয়ে, একাকী আরেক দেশে গিয়েও তার মুখে প্রশস্ত অথচ কষ্টের হাসি। তাতেই সে সবার মন জয় করে নিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে আদর করে খাবার দিয়েছেন। পানি দিয়েছেন। স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় তার আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সীমান্তে কর্মকর্তারা। তার প্রতি উদারতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য সবার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছেন হাসানের মা। তার এই ভিডিও পোস্ট করেছেন স্লোভাক পুলিশ। এতে হাসানের মা ব্যাখ্যা করেছেন, কেন তার ছেলে একা একা এত দীর্ঘ পথ সফর করেছে। হাসানের মায়ের নাম জুলিয়া পিসেসকা। তিনি ভিডিওতে বলেছেন, আমার শহরের পাশেই একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সেখানে গোলা নিক্ষেপ করছে রাশিয়ানরা। এ অবস্থায় আমার বর্ষীয়ান মাকে একা রেখে আমি বাড়ি ছাড়তে পারিনি। এ জন্য হাসানকে পাঠিয়েছি স্লোভাকিয়ায়।
শান্তি সংলাপের আহ্বান চীনের: শান্তি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ইউক্রেন পরিস্থিতিকে তিনি উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সমালোচনার জবাবে বলেছেন, আমি ভীত নই। আত্মগোপনে যাইনি। জাতিসংঘ বলেছে, এ পর্যন্ত ইউক্রেনে কমপক্ষে ১২০৭ জন বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন। মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল বলেছেন, এর মধ্যে কমপক্ষে ৪০৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮০১ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ইরপিনে যুদ্ধ বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে রাশিয়া। তারা মারিউপোলে উদ্ধারের রুটে হামলা চালিয়েছে। ওদিকে মাত্র ১১ বছর বয়সী একটি বালক নিরাপত্তা খুঁজে একা একা পাড়ি দিয়েছে ১২০০ কিলোমিটার পথ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ খাদ্য, পানি, বিদ্যুতের অভাবে মরতে বসেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের খবর পত্রিকা, মিডিয়ায় এলেও এমন দুর্ভোগে থাকা মানুষদের কথা খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তুরস্ক, ফ্রান্স সহ অনেক দেশই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে। পাশাপাশি শান্তি সংলাপের কথা বলছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই তো সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি সংলাপ আহ্বান করেছেন। কিন্তু যুদ্ধের উন্মত্ততা যখন পেয়ে বসে, তখন কেউ কারও কথা শোনে না। হয়তো পুতিনেরও সেই অবস্থা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন শি জিনপিং। এই বৈঠক চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি’তে প্রচারিত হয়েছে। এতে শি জিনপিং বলেন, ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া বন্ধ করতে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এই তিনটি দেশ যৌথভাবে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সংলাপে সমর্থন করে বলেও তিনি দাবি করেন। বর্তমানে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান চীন ও রাশিয়ার মধ্যে। ইউক্রেনে আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে- এ কথা বুঝতে পেরেছেন শি জিনপিং। কিন্তু এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাননি। অন্যদিকে আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল চীন। অন্যদিকে চীন কিন্তু আরেক সংকট সৃষ্টি করেছে। তারা সার্বভৌম তাইওয়ান দ্বীপরাষ্ট্রকে নিজেদের অখণ্ড ভূমি বলে দাবি করেছে। বলেছে, তাইওয়ান তাদের নিজেদের ভূখণ্ড। ফলে অনেকে তাইওয়ান ও ইউক্রেনকে একইভাবে তুলনা করার চেষ্টা করেছেন। এর জবাব দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
ইউক্রেন ও তাইওয়ানের তুলনা হলো দ্বৈত নীতি: ইউক্রেন এবং তাইওয়ানকে তুলনা করা হলো দ্বৈত নীতি বা অবস্থান বলে মন্তব্য করেছে চীন। তাইপে থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জবাবে সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, তাইওয়ান সব সময়ই চীনের অংশ। আর এর পুরোটাই চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
অভ্যন্তরীণভাবে স্বশাসিত তাইওয়ানকে কমপক্ষে গত দুই বছর ধরে নিজেদের দাবি করে আসছেচীন। একই সঙ্গে তাইওয়ানে চীনের সামরিক চাপ বৃদ্ধি করছে তারা। এই দ্বীপরাষ্ট্রকে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শক্তি প্রয়োগের কথাও বলেছে চীন। কিন্তু চীন এবং তাইওয়ান সরকার স্বীকার করে তাইওয়ান এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি ভিন্ন এবং তা ভিন্ন কারণে। চীন বলেছে, তাইওয়ান কখনোই একটি স্বাধীন দেশ ছিল না। অন্যদিকে চিপ প্রস্তুতকারক তাইওয়ান বলছে, ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মতো নয় তাইওয়ান। চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এর কোনো সীমান্ত নেই।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, তাইওয়ান এবং ইউক্রেন ইস্যু মোটেও তুলনীয় নয়। কারণ তাইওয়ান হলো চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্যদিকে ইউক্রেন হলো দুই দেশের বিরোধ। আমরা দেখেছি কিছু মানুষ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের নীতির বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার বিষয়কে খর্ব করে দেখে যাচ্ছেন তারা। এ এক নগ্ন দ্বৈত অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন তিনি।
তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং অস্ত্র সরবরাহকারী হলো ওয়াশিংটন। পক্ষান্তরে তাইওয়ান সরকার যে সার্বভৌমত্ব দাবি করছে তার স্বীকৃতি কখনোই দেয়নি চীন। তাইওয়ান সরকার বলছে, কখনোই তাদেরকে চীন শাসন করেনি। এই দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন তাইওয়ানবাসী।
রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করেছে শেল: তেল কেনাবেচার জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান শেল রাশিয়ার অশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে এরই মধ্যে রাশিয়ান অশোধিত সব তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এর ফলে তাদের সার্ভিস স্টেশন, বেসামরিক বিমান চলাচলে জ্বালানি সরবরাহ এবং লুব্রিকেন্ট অপারেশনও বন্ধ থাকবে। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর ফলে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক বড় বড় কিছু কোম্পানি। হামলার পর থেকেই জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃটেনে এক লিটার পেট্রোলের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১.৫৬ পাউন্ড।