দীর্ঘদিনের অধ্যক্ষকে দায়িত্ব হস্তান্তরে বাধ্য করার পর এবার বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতিসহ ৩ জনকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে প্রভাবশালীরা। অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী সমাবেশ ঘটাতে পারলেও এবার নিজেরাই দলবদ্ধ হয়ে এসে সদস্যদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে। এমন অভিযোগ করেছেন গভর্নিং বডির সদস্যরা। তারা জানিয়েছেন, যে চক্রটি মাদ্রাসাকে ধ্বংস করতে চাইছে, পড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইছে তারা তাদেরকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছে। কমিটির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী সৎপুর কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুর রহমান বলেন, একটি পক্ষ নিজেদের পূর্ব শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। তারা মাদ্রাসাকে ধ্বংস করতে চায়। অবশ্য অপরপক্ষ দাবি করেছে- মাদ্রাসায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। স্থানীয় একাধিক সূত্র ও কমিটির সদস্যরা জানান, বিশ্বনাথ বাজারের পার্শ্ববর্তী শরিষপুর গ্রামের একটি পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তারা সেই বিরোধের জের ধরে মাদ্রাসার বিরুদ্ধে চড়াও হয়। গেল ১লা সেপ্টেম্বর শরিষপুর গ্রামের কিছু শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে মাদ্রাসায় এসে তারা অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক পদত্যাগে চাপ দেয়। অধ্যক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়ে একটি অব্যাহতিপত্র দেন। এ ঘটনায় সন্তুষ্ট না হয়ে মাদ্রাসায় শরিষপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, মো. শাহজাহান, আব্দুল খালিক গিয়ে মারধর করে। তারা এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে কেউ তালা খোলা ও অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় ফিরে আসার সাহস দেখালে তাদের প্রকাশ্যে হত্যার কথা বলে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ৭ই সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে তারা আবার তালা খুলে দেন। এদিকে তাদের দাবি মাদ্রাসা অধ্যক্ষের পদত্যাগ না করায় চাপ অব্যাহত রাখে গভর্নিং বডির ওপর। বডির সদস্যরা অনৈতিক ও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। এতে তারা আরও ক্ষুব্ধ হন। গতকাল বৃহস্পতিবার উপাধ্যক্ষ মাওলানা নাজিম উদ্দিনের আহ্বানে শিক্ষকদের বেতন ব্যাংক থেকে ছাড় করাতে গভর্নিং বডির সভাপতি মাওলানা শফিকুর রহমান, সদস্য ফয়জুল ইসলাম, মো. শামসুল ইসলাম মাদ্রাসায় গেলে শরিষপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, মো. শাহজাহান, আব্দুল খালিকসহ বেশ কয়েকজন এসে তাদের অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করে একটি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেন। যেখানে অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নাজিম উদ্দিনের নাম উল্লেখ ছিল। নাজিম উদ্দিনও সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করা হয়। বাধ্য করা হয় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন মো. শাহজাহান বলেন, তারা কাউকে জোর করে পদত্যাগ করাননি। তারা নিজেদের অসুবিধার অজুহাত দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। বডির সদস্য মো. ফয়জুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে দিয়ে জোর করে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। থানায় অবহিত করতে গেলে তারা আমাদের অভিযোগ নেয়নি। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে করবো। ইউএনকে পত্র দিয়ে করবো। একটি গ্রামের দুষ্কৃতকারীদের হাতে পদত্যাগপত্র দিয়ে আসবো কেনো?