মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আজ এক তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে হচ্ছে ওই বৈঠক। ভেন্যু জাতিসংঘ সদর দপ্তর। পেশাদার কূটনীতিকরা বলছেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বৈঠক বিরল ঘটনা! আর বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল কল্পানাতীত। যা সম্ভব হয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য। আজ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে উচ্চপর্যায়ের বিতর্ক শুরু হচ্ছে। এতে অংশ নিতে ৫৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে নিউ ইয়র্ক গেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টও এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ও পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ই সেপ্টেম্বর সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টার এটাই প্রথম বিদেশ সফর। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি-বিপ্লবের অপচেষ্টা রোধসহ অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে আপৎকালীন সরকার। এই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশন তথা বিশ্বনেতাদের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাতে নিউ ইয়র্ক পৌঁছার পর তার প্রথম বৈঠক হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। দুপুরে সেই বৈঠক। শনিবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, ২৭শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে স্থান পাবে। তাছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ডাচ্ প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইড’র প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক হবে। ইতালির প্রেসিডেন্ট, কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে। এছাড়াও, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণের জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিনদিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন অধ্যায়: এদিকে পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে ইউনূস-বাইডেন বৈঠককে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বলা হচ্ছে- এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ গত কয়েক দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেননি। স্মরণ করা যায়, সমপ্রতি ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো বর্ণনা করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, তার প্রশাসন অর্থনৈতিক ‘পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও পুনরায় চালু’ করতে, আর্থিক খাত, বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ সব বলেন। মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।