আন্দোলনে নিহত দুলালের পরিবারে এখন কেবল অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪

ডেডলাইন ১৮ই জুলাই ২০২৪। কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে রণক্ষেত্র কিশোরগঞ্জ জেলা শহর। প্রতিদিনের মতো সেদিনও শহরের প্রাণকেন্দ্র গৌরাঙ্গবাজার মোড়ে জুতা সেলাই ও কালী করার কাজ করছিলেন দুলাল রবিদাস (৬৫)। বেলা পৌনে ১২টার দিকে শহরের আঠারোবাড়ী কাচারী মোড়ে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিলের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে। এর জেরে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উত্তপ্ত হয় গৌরাঙ্গবাজার মোড় এলাকা। সেখানে সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের গ্যাসে মোড় সংলগ্ন গলিতে আশ্রয় নেয়া দুলাল রবিদাস গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে তিনি সেখানেই ঢলে পড়েন। খবর পেয়ে স্বজনেরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলেও পথেই মারা যান দুলাল রবিদাস।
বাবা হারানোর সেই দুঃসহ বেদনার কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুলাল রবিদাসের ছেলে বিকাশ রবিদাস (২০)। তিনি জানান, তাদের ৫ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন দুলাল রবিদাস। বাবাকে সহায়তা করতে কিছুদিন আগে বিকাশ নিজে শহরের একটি ক্লিনিকে কাজ নিয়েছেন। এরপরও কায়ক্লেশে চলতো তাদের সংসার। এখন দুলাল রবিদাসের মৃত্যুতে পরিবারটি সংকটের মধ্যে পড়েছে। গৃহকর্তাকে হারানোর শোকের পাশাপাশি পরিবারটি পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। কষ্টে দিনাতিপাত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। তিনি জানান, তারা দুই ভাই ও দুই বোন। সবার বড় বোন সুমী রানী দাসের ৮ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। সে স্বামীর বাড়িতে রয়েছে। বাকি তিন ভাইবোন বড় ভাই আকাশ রবিদাস (২৫), ছোট ভাই বিকাশ রবিদাস নিজে ও ছোট বোন আকাশী রানী দাস (১২) এবং মা পান্না রানী দাসকে নিয়ে তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার কোনোরকমে চলে যেতো বাবা দুলাল রবিদাসের স্বল্প উপার্জনে। দুলাল রবিদাস শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। আন্দোলনের মধ্যে পড়ে টিয়ারশেলের গ্যাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান। এ পরিস্থিতিতে তাদের পরিবারটি এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী এসএম হাফিজুর রহমান বলেন, দুলাল রবিদাসের পরিবারটি খুবই দরিদ্র। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশাহারা। আমাদের প্রত্যাশা, এ পরিবারের সহায়তায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগিয়ে আসবে।